-
একটি বিষয় সবসময় মনে রাখতে হবে কোনো কিছু অতিরিক্ত ভালো নয়।তেমনি যদি চিনির কথা বলি,লাল চিনিতে কিছু ভালো পুষ্টি আছে শুনে গদগদ করে খাওয়া শুরু করে দিলে কিন্তু হবেনা। চিনি থেকে গুঁড় ভালো, গুড় থেকে মধু।
আজ আমি লাল চিনি নিয়ে আলোচনা করবো।অন্তত সাদা চিনি থেকে এর গ্রহণযোগ্যতা তুলনামূলক বেশি বলেই আজ আপনাদের সাথে এ বিষয় আলোচনা করতে চলে আসলাম।তবে চলুন জেনে নেয়া যাক,লাল চিনির গুনাগুন-
বাংলাদেশ খাদ্য বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ইন্সটিটিউটের পরীক্ষায় দেখা গেছে, আখ থেকে উৎপাদিত লাল চিনিতে ক্যালসিয়ামের মাত্রা ১৬০.৩২, পটাশিয়াম ১৪২.৯ ভাগ, শতকরা ৪৬ ভাগই থাকে সুক্রোজ, ফসফরাস ২.৫ থেকে ১০.৭৯, আয়রন ০.৪২ থেকে ৬ ভাগ, ম্যাগনেশিয়াম 0.১৫ থেকে ৩.৮৬ ভাগ, সোডিয়াম 0.৬ ভাগ। এছাড়াও পাওয়া যায় কপার, আয়রন, ম্যাঙ্গানিজ, জিংক ও ভিটামিন বি।
এবার সংক্ষেপে উপকারিতা জেনে নেই-
-
এক
সম্পূর্ণ রাসায়নিক থেকে মুক্ত সাদা চিনির বিপরীতে, লাল চিনি সম্পূর্ণ রাসায়নিক থেকে মুক্ত।ব্রাউন চিনির আখের রস থেকে প্রস্তুত করা হয় এবং এতে কেবলমাত্র গুড়ের একটি অল্প পরিমাণ থাকে যা ব্রাউন চিনির রঙ এবং স্বাদ সরবরাহ করে
-
দুই
গুরুত্বপূর্ণ খনিজ রয়েছে লাল চিনিতে ক্যালসিয়াম, আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম এবং পটাসিয়ামের মতো গুরুত্বপূর্ণ খনিজ বিদ্যমান।এক চা চামচ লাল চিনি আপনাকে আপনার প্রতিদিনের প্রয়োজনের ক্যালসিয়ানের ২০% যোগান দিতে সক্ষম।গর্ভাবস্থায় রক্তাল্পতা প্রতিরোধ বা চিকিৎসার জন্য লাল চিনি বেশ গুরুত্বপূর্ণ।তবে অতিরিক্ত গ্রহণ করা যাবেনা।
-
তিন
ততক্ষণাৎ শক্তি দিবে লাল চিনি আপনাকে স্বল্প সময়ের জন্য একটি প্রাকৃতিক শক্তি দিবে।আপনি যখন দুর্বল বোধ করবেন একটু লাল চিনি খেয়ে নিলেন। তবে সাদা চিনি আপনাকে কেবল অল্প সময়ের জন্য শক্তি সরবরাহ করবে।
-
চার
হজম উন্নতিতে সহায়তা করে লাল চিনি আপনার হজম উন্নতি করতে অত্যন্ত উপকারী।আদার টুকরা এবং কিছু লাল চিনির সাথে সিদ্ধ পানি পান করা কোষ্ঠকাঠিন্য নিরাময়ের জন্য অত্যন্ত সহায়ক।
-
পাঁচ
আ্যন্টিসেপটিক হিসেবে-
লাল চিনি একটি অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি হিসাবে কাজ করে এবং এর অ্যান্টি-মাইক্রোবিয়াল বৈশিষ্ট্যগুলি সংক্রমণ রোধ করতে পারে।তাই কোথাও হালকা কেটে গেলে সাবান পানি দিয়ে জায়গাটি ধুয়ে একটু লাল চিনি দিতে পারেন,কাজে দিবে।তবে অবশ্যই বড় কাটা আঘাতে এই কাজ করতে যাবেন না।
-
ছয়
ঋতুস্রাব নিয়মিত করে ও গর্ভবতী মহিলাদের জন্য উপকারী
লাল চিনির পটাশিয়াম জরায়ু পেশী শিথিল করতে সহায়তা করে মাসিক নিয়মিতো করে। তাছাড়াও মহিলাদের জন্য প্রসবের পরে দ্রুত সুস্থ করতে লাল চিনি খুব ভাল। মহিলাদের প্রসবের পরে দূর্বলতা কাটিয়ে উঠতে বেশ সময় লাগে।তখন লাল চিনি সেবন করলে দ্রুত আরোগ্য লাভ করতে সহায়তা করে।
-
সাত
ত্বকের সুরক্ষায়
লাল চিনি আপনার ত্বককে হাইড্রেট এবং ময়শ্চারাইজ করতে এবং আপনার ত্বকের ফোলাভাব কমাতে অত্যন্ত উপকারী।এটি ত্বকের কোষগুলিকে নতুন করে তৈরি করে ত্বককে প্রাণবন্ত করতে সহায়তা করে। এটি ত্বকের কোষকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করে।
-
আট
হাঁপানি রোধ করে
লাল চিনির একটি বিশেষ উপকারিতা হল হাঁপানি রোধ করা। হাঁপানি অ্যান্টি-অ্যালার্জিক বৈশিষ্ট্যের কারণে ঘটে।তাই হাঁপানি রোগীদের সাদা চিনির বদলে লাল চিনি পরিমানমতো গ্রহণের কথা বলা হয়েছে।দীর্ঘদিন থেকে লাল চিনি ঠান্ডা নিরাময়ের কার্যকর প্রতিকার হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
বুঝতেই পারছেন এখন কেনো আমি লাল চিনি নিয়ে আপনাদের সামনে আজ হাজির হলাম।তবে সতর্ক লেখার মাঝেও করেছি এখনো করছি,অতিরিক্ত গ্রহণে কিন্তু মোটা হয়ে যাওয়া ছাড়াও রক্তে গ্লুকোজের পরিমান বেড়ে যাওয়া ইত্যাদি সমস্যার সম্মুখীন হবেন।তাই বিশেষজ্ঞের পরামর্শ অনুযায়ী যেকোনো খাবার গ্রহণ করুন স্বাচ্ছন্দ্যে।ভালো থাকুন,সুস্থ থাকুন।
ধন্যবাদান্তে,
ডায়েটিশিয়ান সিরাজাম মুনিরা
কনসালটেন্ট
ইবনেসিনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও কেয়ার মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল
ডায়েটিশিয়ান সিরাজাম মুনিরা |
সুস্থ্য থাকতে কোনটি খাবেন সাদা চিনি নাকি লাল চিনি ? |
পুষ্টি |
- royalbangla.com এ আপনার লেখা বা মতামত বা পরামর্শ পাঠাতে পারেন এই এ্যড্রেসে [email protected]
পরবর্তী পোস্ট |
ইউরিন ইনফেকশন: কারণ ও প্রতিরোধের উপায় |