অধিকাংশ স্কুল গামী শিশুর মুটিয়ে যাওয়ার কারন হলো অস্বাস্থ্যকর বা শর্করাপ্রবন টিফিন মেনু !
সেদিন অস্ট্রেলিয়ায় বসবাসরত এক অভিভাবক এর সাথে কথা হচ্ছিলো তার সন্তান যে প্রি স্কুলে যায় সেখানকার টিফিনে yougurt + fruits স্কুল থেকেই দেয় ( ওখানকার সিস্টেম) ।
আমি জিজ্ঞেস করলাম আপনার বাচ্চা খায় এগুলা। বলে হা খায় ত মজা করেই খায়। ওরা ত ছোট থেকে এগুলাই টিফিন খেয়ে আসছে , সেদিন আরেক অভিভাবক ( বাচ্চার নানী / দাদী) এর সাথে কথা হচ্ছিলো বাচ্চার ওজন বয়স ও উচ্চতার তুলনায় ৩৪ কেজি বেশি। অনেকক্ষন হিস্ট্রি নিয়ে যেটা বুঝলাম একটা ৫০০ এম এল এর বক্সের সাইজে এক বক্স নুডুলস টিফিনে বাচ্চা কে দেয়া হয়! আমাকে বেশ বিরক্ত নিয়ে দেখাচ্ছিলেন যে এই দেখেন শুধু এইটুকুই খাবার খায়। দেখলাম সাদা সিধা নুডুলস কোন সবজি নাই কিছু নাই। আর বুঝলাম উনি খাবারের যে একটা পরিমান আছে বুঝেননা।
খুব সচেতন একজন অভিভাবক কর্মজীবি স্বাভাবিক তিনি সময় পান না তাই দ্রুত ও শটকাট খাবার রাখেন স্কুলের টিফিনে।
আমি ভেবেছিলাম শটকাট মানে ফল হবে। কিন্তু মেনু দেখি চিকেন নাগেটস, সমুচা, কেক, বিস্কিট, বেশি ফ্রোজেন আইটেম!!
সমস্যা আসলে অভিভাবক বা বাচ্চার নয়।সমস্যা আমাদের সিস্টেমের! আমার যা দেখে আসছি তাই করি। সিংগারা পুরি আমাদের মধ্য সকাল বা টিফিনের খাবার! আর চটপটি, পুরি, মোগলাই আমাদের বিকালের নাস্তা! পরিবর্তন জিনিস টা শুরু করতেই আমরা ভয় পাই।
আমি একটা জিনিস বিশ্বাস করি যেই পরিবারের বাবা মায়ের খাদ্যভাস যেমন বাচ্চার খাদ্যভাস ও তেমনি হয়। তাই পরিবার যেমন শিশুর প্রথম বিদ্যালয় তেমন শিশুর ভবিষ্যৎ স্বাস্থ্য সুরক্ষা কত খানি স্ট্রং হবে এটা নির্ভর করে তার ছোট বেলার খাবারের অভ্যাসের উপর!
টিফিন নিয়ে শিশুদের ভেতর যেই আভিজাত্য আজকাল দেখা যায় তা এলার্মিং!!! আমরা জানি না আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম কেবল এই বাজে খাদ্যভাসের জন্য ই হয়তো নানা রোগের কারখানায় পরিনত হবে!!!
আমি জানি কেউ কেউ হয়তো এই কথা গুলো নেতিবাচক ভাবে নিবেন বা বলবেন "এত কিছু বানানোর সময় কই!!!
কেউ বা বলবেন সিংগারা সমুচা না খেলে খাবে কি! কেউ বা বলবেন রঙ ঢং এর ফল খাওয়ার এত টাকা কই পাবো!
বার্গার আর পিজ্জা খাওয়া জাতি ফল কিনতে না পারা টা কি অর্থের অভাব নাকি বিলাসিতা আমি কনফিউজড!!!
নিচের ছবিটা দেখুন সব ই আছে কিন্তু পরিমান কম। বাটির বড় সাইজে ভালো খাবার। ছোট সাইজে শর্করা!! সকালে নাস্তা করে বের হওয়া বাচ্চা টিফিনে হালকা ফল ই যথেষ্ট!
স্কুলের টিফিনে আর কি থাকতে পারে???
১। কলা এবং ডিম
২. ডিম স্যান্ডউইচ সবজি দিয়ে
৩। বাদাম এবং আপেল
৪। ছোলা সেদ্ধ এবং শসা গাজর
৫। একটা বড় লাল আপেল
৬। ১/২ কাপ নুডুলস সাথে ১ কাপ সবজি মিক্স
৭. ঘরে বানানো ফিশ বল
৮. চিকেন বল (ডিপ ফ্রাই না) + কমলা
৯. ছোট একটা চিকেন বান সাথে ১/২ কমলা
১০. চালের আটার চাপটি বা ডিম পিঠা
১১. সবজি পাকোড়া
১২. মিক্সড বাদাম এবং খেজুর
১৩. মিষ্টিকুমড়োর বিচি এবং ডিম বয়েল ইত্যাদি......
সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়ে অভিভাবক রা! স্কুল গুলার পরিবেশের জন্য। এক বাচ্চার টিফিন এমন হেলদি দিলে আরেক বাচ্চা বুলিং করে। আমাদের ভেতর সচেতনতার অভাব আছে। কেউ কেউ নিজেদের করা ভুল কে গ্রহনযোগ্যতা পাওয়ার জন্য বলে যে ' এত কিছু করে কি হবে ধুর খেয়ে দেয়ে মরে যাবো! ' আমরা এভাবে বললে বাচ্চা রা কি শিখবে!!!
স্কুল বা প্রতিষ্ঠান গুলার উচিত স্কুল টিফিনের প্রতি বিশেষ নজর দেয়া! স্কুল গামী বাচ্চাদের খাবার যথাযথ পুষ্টিগুন না হলে শিশু সব দিক থেকেই পিছিয়ে পড়বে! স্কুলের ভেতর কত নিয়ম নীতি পাঠ্য পুস্তকে কত জ্ঞানের কথা সুষম খাবার নিয়ে অথচ স্কুল টিফিনে কোন মনিটরিং নাই!!!
হয়তো এক সময় দেখবো ইন শা আল্লাহ আমাদের দেশেও স্বাস্থকর টিফিন স্কুল থেকেই দিচ্ছে অথবা অভিভাবক কে সচেতন করতে সব স্কুলেই একজন নিউট্রিশনিস্ট নিয়োগ পাচ্ছে।
আমাদের কেই এগিয়ে আসতে হবে পরবর্তী প্রজন্মকে নিরাপদ স্বাস্থ্য সুরক্ষা প্রদানে!
এই লেখকের সব লেখা পড়ুন নিচের লিংক থেকে।
www.royalbangla.com/নিউট্রিশনিস্ট-সুমাইয়া-সিরাজী-102934114426153
লেখক
নিউট্রিশনিস্ট সুমাইয়া সিরাজী
Bsc (Hon's) Msc (food & Nutrition)
CND (BIRDEM), CCND (BADN)
Trained on Special Child Nutrition
Consultant Dientitiant (Ex)
Samorita Hospital
Mobile: 01750-765578,017678-377442
লেখকের সাথে যোগাযোগ করতে নিচের ফেসবুক পেইজে ক্লিক করুন
www.facebook.com/নিউট্রিশনিস্ট-সুমাইয়া-সিরাজী-102934114426153/