বেশি ওজন নিয়ে অনেকেই যেমন চিন্তিত, ঠিক তেমনি কম ওজনের মানুষগুলোও অনেক চিন্তিত থাকেন। উভয় প্রকারের মানুষগুলো একধরনের ডিপ্রেশনে ভুগতে থাকেন। ওজন কম বা বেশি যেটাই হোক না কেন, উভয়কেই অপুষ্টির শিকার বলে মনে করা হয়। এই ডিপ্রেশন থেকে অনেকেই দেখি সোস্যাল মিডিয়ায় পোস্ট দিয়ে থাকেন যে, কিভাবে ওজন কমাবো বা কিভাবে ওজন বাড়াবো? কমেন্টে যেসব পরামর্শ থাকে সেগুলোর বেশির ভাগই আপনার স্বাস্থ্য ঝুকি বাড়িয়ে দিবে। যেমন কেউ হয়ত জানতে চেয়েছে যে, ওজন বাড়াবো কিভাবে ? উত্তরে পরামর্শগুলো থাকে এমন-
বেশি করে ভাত খান আর ঘুমান
সারাদিনে ২ লিটার সেভেন আপ বা ফান্টা খান
তিনবেলা পেটভরে পান্তাভাত খান আর ঘুমান
সারাদিন ৫০০ গ্রাম মিষ্টি খান।
তেলে ভাজা খাবার বেশি খান।
ফাস্টফুড বেশি খান।
রান্নায় বেশি বেশি তেল দেন।
প্রতিদিন ১-২ লিটার ফ্রুটো জুস খান।
প্রতিদিন ২ ঘন্টা জিম করেন।
গরুর মাংস আর খাসির মাংস বেশি খান।
এমন হাজারটা পরামর্শ আপনি পাবেন। অনেকেই সেগুলো মেনেও চলছেন, ফলাফল স্বরুপ অস্থায়ীভাবে কিছু ওজন বাড়লেও স্থায়ী কিছু ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি থাকে। এমন খাদ্যভ্যাসের কারনে আপনার বডি ফ্যাট বেড়ে যাবে, রক্তের কোলেস্টেরোল(ট্রাই গ্লিসারাইড) বেড়ে যাবে , হৃদ রোগের ঝুকিও বেড়ে যাবে, শরীর সঠিক পুষ্টি পাবে না। তেল বা চর্বি আমাদের শরীরে দরকার আছে, তবে সেটা মাত্রাতিরিক্ত নয়। মনে রাখবেন, আমাদের শরীরে যে পরিমানে তেল বা চর্বি জাতীয় খাবার দরকার, সেই পরিমানে তেল বা চর্বি সৃষ্টিকর্তা প্রতিটি খাদ্যের ভিতরে প্রাকৃতিক ভাবেই দিয়ে দিয়েছেন। তাই ওজন বাড়ানোর জন্য অতিরিক্ত তেল চর্বি খাবেন না। পরিমিত পরিমানে সুষম খাবার খান, স্বাভাবিক খাবার খান। সময়মত খাবার খান এবং পরিমত পরিমানে খাবার খান।
প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় রুটি, ডিম , মাছ, মাংস, ডাল এবং পর্যাপ্ত পরিমানে শাক সবজি রাখবেন। প্রতিদিন কিছু পরিমানে মৌসুমী ফল খান। প্রতিদিন একটু বাদাম খাওয়ার অভ্যাস করেন, এতে শরীরের ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিডের চাহিদা কিছুটা পুরন হবে। ওজন বাড়ানোর একটা অন্যতম খাবার হতে পারে দুধ এবং কলা। তাই আপনার শরীরের চাহিদা অনুযায়ী প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় পরিমানমত দুধ এবং কলা রাখুন। আমাদের সমস্যা হচ্ছে, আমাদের কেউ যদি বলে যে, অমুক খাবার টা খেলে ওজন বাড়বে তখন আমরা শুধু সেই খাবারটাই খেতে থাকি। যা মোটেও স্বাস্থ্যকর নয়। কারন আমাদের শরীরে প্রতিটি খাবারের একটা নির্দিষ্ট চাহিদা থাকে। চাহিদার অতিরিক্ত খাওয়া ঠিক নয়। এতে শরীরের ক্ষতি হবে। উদাহরন হিসাবে বলা যায়, ধরুন আপনার ঘরের বারান্দায় মাটির টবে আপনি ফুলের গাছ লাগিয়েছেন। আপনি জানেন যে, গাছের জন্য খাদ্য হিসাবে সার খুবই উপকারী। সেই ভেবে এখন আপনি প্রতিটি গাছের গোড়ায় আধা কেজি করে সার দিলেন। কয়েক ঘন্টা পরে দেখবেন যে, আপনার শখের সমস্ত গাছ মারা গেছে। কারন একটাই যে আপনি গাছের গোড়ায় মাত্রাতিরিক্ত খাবার দিয়েছেন। একইভাবে আপনিও যদি কোন খাবার মাত্রাতিরিক্ত খান, তাহলে সেটাও আপনার জন্য হুমকিস্বরুপ হবে। তাই ফ্রি ফ্রি পরামর্শ পেয়েছেন বলে লুফে নিবেন না। পরামর্শ যদি নিতেই হয় তাহলে একজন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।
এই ব্যাপারে ডাঃ Mukit Osman ভাইয়ের একটা বিখ্যাত বানী দিয়ে শেষ করতে চাই। কয়দিন আগে দেখলাম ডাঃ মুকিত ওসমান ভাই একটা মোটর সাইকেলের উপরে বসে উনার ফেসবুক আইডিতে একটা ছবি দিয়েছেন। মোটর সাইকেলের সামনে লেখা আছে প্রেস(press) । কেউ একজন কমেন্টে লিখেছেন, ভাই কি ডাক্তারি বাদ দিয়ে সাংবাদিকতা শুরু করলেন?? উত্তরে ডাঃ মুকিত ওসমান ভাই লিখেছেন, হ্যা ভাই, এখন প্রেসের লোকজনই ভালো জানেন যে, কোনটা সঠিক চিকিৎসা আর কোনটা ভুল চিকিৎসা। নিশ্চয় বুঝতে পেরেছেন ডাঃ সাহেব কি বোঝাতে চেয়েছেন? তাই যেকোন বিষয়ে পরামর্শ নিতে চাইলে অবশ্যই একজন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন। সুস্থ থাকুন, ভাল থাকুন।
পুষ্টিবিদ মোঃ ইকবাল হোসেন
চেম্বারঃ
সার্জিস্কোপ হাসপাতাল, ইউনিট-২, কাতালগঞ্জ, চট্টগ্রাম। প্রতি শুক্রবার থেকে বুধবার, সন্ধ্যা ৭ঃ০০ টা থেকে রাত ১০ঃ০০ টা পর্যন্ত।
সিরিয়ালের জন্যঃ ০১৭৬৪-৭৮৬৭৫৩
অনলাইন সেবা পাওয়ার জন্য
হোয়াটস এ্যাপ নম্বর-01533843123