সারা বিশ্বের সাথেসাথে বাংলাদেশেও ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। এ পর্যন্ত বাংলাদেশে প্রায় ৮৫ লক্ষ মানুষ এ রোগে আক্রান্ত।
ডায়াবেটিস কি?
ডায়াবেটিস ইনসুলিন হরমোনের অভাবজনিত একটি রোগ। এই রোগে শরীরে গ্লুকোজ(শর্করা) কাজে লাগানোর ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যায় বা কমে যায়। গ্লুকোজ কোষের ভিতরে প্রবেশ করতে পারে না, ফলে গ্লুকোজ রক্তে অবস্থান করে।
ডায়াবেটিসে একবার আক্রান্ত হলে আর কখনো ভালো হয়না, কিন্তু ডায়াবেটিস কে ভালো রাখা যায়। আমার মতে ডায়াবেটিস আহামরি কোনো খারাপ অসুখ নয়, তাই একে ভয় না পেয়ে ভলোবেসে নিয়ণ্ত্রনে রাখাই হবে বুদ্ধিমানের কাজ। শুনে হয়তো আপনি অবাক হচ্ছেন যে, কেনো আমি ডায়াবেটিসকে খারাপ অসুখ বলছিনা! একটু সহজ করে দিই।
আপনি আপনার আশেপাশে খেয়াল করুন, অনেক ডয়াবেটিক ব্যক্তি দেখতে পাবেন, যারা ৫বছর, ১০বছর, ২০বছর বা ৪০বছর যাবৎ ডায়াবেটিস এ আক্রান্ত। তারপরও তারা স্বাভাবিক জীবনযাপন করছেন।পৃথিবীতে আর ২য় কোনো রোগ নেই যেটা হলে মানুষ এতোদিন বেঁচে থাকতে পারে, এটা শুধু ডায়াবেটিসেই সম্ভব।
আমরা সেই রোগকে খারাপ বলে থাকি যে রোগের মৃত্যুঝুকি বেশি থাকে। কিন্তু ডায়াবেটিস রোগে মৃত্যুঝুকি নেই বললেই চলে।তাই আমি মনে করি যে ডায়াবেটিস আসলেই কোনো খারাপ অসুখ নয়। তবে অনিয়ণ্ত্রিত ডায়াবেটিস এ কিছু জটিলতা থাকে, যা ডায়াবেটিস নিয়ণ্ত্রনের মাধ্যমে সহজেই জটিলতাগুলো এড়িয়ে চলা যায়।
ডায়াবেটিস ভালো রাখতে করণীয়ঃ
ডায়াবেটিস নিয়ণ্ত্রনের জন্য শৃঙ্খল জীবনযাপন খুবই জরুরী। ডায়াবেটিস নিয়ণ্ত্রনের জন্য ৩টি D যুক্ত শব্দ মেনে চলতে হবে-
১) Diet
২)Discipline
৩)Drug
খাবর ব্যবস্থাপনা মেনে চলতে হবে, শৃঙ্খলা মেনে চলতে হবে এবং ঔষধ ব্যবস্থাপনা মেনে চলতে হবে।
ডায়েটঃ
ডায়েটই হচ্ছে ডায়াবেটিসের প্রথম চিকিৎসা । সবধরনের মিষ্টি জাতীয় খাবার বন্ধ করতে হবে। চিনি, গুড়, গ্লুকোজ, আখের রস, খেজুরের রস, তালের রস, মিছরী, মধু, মিষ্টি বিস্কুট, পিঠা পায়েস, হরলিক্স, মাল্টোভা এবং এগুলো দিয়ে তৈরী সমস্ত খাবার বন্ধ করবেন। বাকি সমস্ত খাবার পরিমিত পারিমানে খাবেন।
সুষম খাবার গ্রহণের অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। আপনার প্রতিবেলার খাবারে সঠিক অনুপাতে কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন, ফ্যাট এবং অন্যান্য ভিটামিন মিনারেলস খনিজলবন এর উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে। যেসব খাবারের গ্লাইসিমিক ইনডেক্স কম সেই সকল খাবার খাদ্যতালিকায় রাখার চেষ্টা করতে হবে। শর্করা জাতীয় খাবার শরীরের চাহিদা অনুযায়ী মেপে খেতে হবে। জটিল শর্করা খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে, (যেমন লাল আটা, লাল চাল)। ফ্যাট, প্রোটিন পরিমানমত খেতে হবে। শাক-সবজি , শসা-খিরা বেশি খেতে হবে। সারাদিনে যথেষ্ট পরিমান পানি পান করতে হবে ।
সারাদিনের মোট ক্যালরী(খাবার) কে ৫-৬ বারে ভাগ করে খেতে হবে। একবারে পেটপুরে খাওয়া যাবে না বা অনেক্ষন না খেয়ে থাকা যাবে না। সময়মত খেতে হবে এবং পরিমানমত খেতে হবে।
ফলঃ
টকজাতীয় ফল যেমন, জাম, লেবু, আমড়া, আমলকি, জাম্বুরা, কাচাপেয়ারা, জলপাই, জামরুল, বাঙি, কচিডাবের পানি এগুলো বেশি খাওয়া যাবে।
মিষ্টিফল দিনে একবার খাবেন পরিমিত পরিমানে। হয়ত আজকে একটা মাঝারী সাইজের আপেল খেয়েছেন, তাহলে আজকে আর কোন মিষ্টিফল খাবেন না, আবার আগামিকাল।
ব্যায়ামঃ
সপ্তাহে ৫-৬ দিন আপনার শারীরিক ক্ষমতা অনুযায়ী হাটবেন বা অন্য যেকোন ব্যায়াম করবেন। সকালে বিকালে বা রাতে, আপনার সুবিধামত সময়ে। একবেলার ব্যায়াম একবেলার ঔষধেরমত কাজ করে।
ঘুমঃ
রাতের আধারে পর্যাপ্ত পরিমানে(৬-৮ঘন্টা) ঘুমাতে হবে । রাতে দেরী করে ঘুমিয়ে সকালে দেরীতে ঘুম থেকে উঠবেন, সেটা করা যাবে না। ঘুম সবসময় রাতের আধারেই হতে হবে।
নিয়মিত ফলোআপঃ
ডায়াবেটিস নিয়ণ্ত্রনের আর একটি অন্যতম উপায় হচ্ছে ডায়াবেটিস এর রুটিন চেকআপ। মানে ডাক্তার আপনাকে যেদিন সুগার টেস্ট করাতে বলবে সেদিন করাবেন। এতে সুগার লেভেল একটু কম বা বেশি থাকলে ঔষধ পরিবর্তনের মাধ্যমে খুব সহজেই নিয়ন্ত্রন করা যায়।
ঔষধঃ
ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কোন ঔষধ বন্ধ করবেন না বা নতুন ঔষধ খাওয়া শুরু করবেন না। সবচেয়ে ভলোহয় একজন পুষ্টিবিদের সাথে পরামর্শ করে আপনার সারাদিনের খাদ্যতালিকা ঠিক করে নেওয়া।
এই লেখকের সব লেখা পড়ুন নিচের লিংক থেকে।
www.royalbangla.com/Nutritionist.Iqbal
লেখক
পুষ্টিবিদ মোঃ ইকবাল হোসেন
বিএসসি (সম্মান), এমএসসি (প্রথম শ্রেণী) (ফলিত পুষ্টি ও খাদ্য প্রযুক্তি)
পুষ্টি কর্মকর্তা
চট্টগ্রাম ডায়াবেটিক জেনারেল হাসপাতাল
জাকির হোসেন রোড, খুলশি।
চট্টগ্রাম।
চেম্বারঃ
সার্জিস্কোপ হাসপাতাল, ইউনিট-২, কাতালগঞ্জ, চট্টগ্রাম।
প্রতিদিন সন্ধ্যা ৫ঃ৩০-৮ঃ০০ টা
চেম্বারঃ
>
হাটহাজারী ডিজিটাল ডায়াগনস্টিক সেন্টার, হাটহাজারী, চট্টগ্রাম।
প্রতি বুধবার বিকাল ৩ টা থেকে ৫ টা পর্যন্ত।
লেখকের সাথে যোগাযোগ করতে নিচের ফেসবুক পেইজে ক্লিক করুন
www.facebook.com/Nutritionist.Iqbal