আমাদের অনেকেরই অভিযোগ থাকে যে, আমার বাচ্চাকে সবধরনের খাবার খাওয়ায় তবুও তার ওজন বাড়ে না , উচ্চতা বাড়ে না। কেন এমনটা হচ্ছে। আপনাকে মনে রাখতে হবে জেনেটিক্স বলে একটা বিষয় আছে। আমি এটাও বলছি না যে শুধু জেনেটিক্স এর উপরেই সবকিছু নির্ভর করে। আরো অনেক বিষয় আছে। তারমধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে মা এবং মায়ের যত্ন। যেটা আমরা অনেকেই একেবারেই ভুলে যাই।
আপনার বাচ্চা পৃথিবীতে ভুমিষ্ঠ হওয়ার পর থেকেই তাকে আপনি এক্সট্রা কেয়ার নিচ্ছেন। খুব ভাল কথা। কিন্তু আপনি কি জানেন যে, আপনার বাচ্চার যত্ন শুরু হওয়া উচিৎ ছিল তার মায়ের গর্ভে থাকা অবস্থায়। আমরা কি কখনো সেটা ভেবে দেখেছি? আমরা যেটাকরি সেটা হলো- বাচ্চার বয়স ছয়মাস হয়ে গেছে, এখন থেকে বুকের দুধের পাশাপাশি তাকে সমস্ত খাবার একবারে খাওয়াতে চায়। বাচ্চার সমস্ত চাহিদা অনুযায়ী খাবার আমরা কিনে থাকি, মাঝেমাঝে চাহিদার অতিরিক্তও কিনি। কিন্তু মায়ের স্বাস্থের ব্যাপারে যেন সকলেই বেশ উদাসীন।
কিন্তু না, বাচ্চার নার্সিং টা শুরু হওয়া উচিৎ ছিল মায়ের গর্ভকালীন সময়ে। অথবা তারও অনেক আগে। কি, গর্ভকালীন সময়েরও আগে বাচ্চার যত্ন নিতে হবে এটা শুনে নিশ্চয় অবাক হচ্ছেন, তাই না? অবাক হওয়ার কিছু নেই, আপনি ঠিকই শুনেছেন। আচ্ছা মায়ের স্বাস্থ্য যদি ভাল না হয়, তাহলে বাচ্চার সুস্থ স্বাভাবিকভাবে বেড়ে উঠবে কিভাবে? তাই আগে মায়ের যত্ন নিন। কন্সিভ করার আগে দেখুন মায়ের ম্যালনারিসড বা ওভারনারিসড আছে কিনা। চাষের জমিতে বীজ বপন করার আগে যেমন জমির পরিচর্যা খুব জরুরী, একইভাবে বেবি কনসিভ করার আগে মায়ের পরিচর্যাও খুব জরুরী। জমি যদি উর্বর না হয়, তাহলে ফসল ভাল মানের হবে না। একইভাবে, মা যদি সুস্থ স্বাভাবিক না থাকে, তাহলে কিন্তু বাচ্চাও সুস্থ স্বাভাবিক হবে না। একজন সুস্থ স্বাভাবিক মা ই পারে একটি সুস্থ স্বাভাবিক শিশুর জন্ম দিতে।
এরপর মা যখন কন্সিভ করবে তখনও মায়ের যত্ন নিন। মায়ের খাবারের দিকে নজর দিন। মায়ের এই প্রত্যক্ষ্য কেয়ারই সন্তানের পরোক্ষ কেয়ার হিসাবে বিবেচিত হবে। শুধু খাবার নয়, মায়ের শারীরিক এবং মানসিক স্বাস্থ্যের দিকেও নজর দিন । এইসময়ে মায়ের মানসিক স্থিতি খুব জরুরী। এইসময়ে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মায়ের মানসিক স্বাস্থ্য খুব বেশি নড়বড়ে হতে পারে। মানসিক স্বাস্থ্যের স্থিতির জন্য পরিবারের সাপোর্ট খুব বেশি জরুরী। শারীরিক সমস্যাও কিছু দেখা যেতে পারে। তবে সবকিছুই নিরাময়যোগ্য। মনে রাখবেন, মা যদি সুস্থ সবল থাকে তাহলেই আপনি একজন সুস্থ স্বাভাবিক সন্তানের আশা করতে পারেন। তাই বাচ্চার স্বাস্থ্যের আগে মায়ের সু-স্বাস্থ্য নিশ্চিৎ করুন।
দুই-একটা উদাহরন দিই। ধরুন প্রেগন্যান্সিকালীন সময়ে মায়ের হিমোগ্লোবিন লেভেল স্বাভাবিক অপেক্ষা অনেক কম আছে। আপনি যদি দ্রুত মায়ের রক্তের হিমোগ্লোবিন লেভেল বাড়াতে না পারেন, সেক্ষেত্রে আপনার বাচ্চার শরীরে অক্সিজেনের ঘাটতি দেখা দিবে। ফলে বাচ্চার কোন অঙ্গ আংশিক বা সম্পুর্নরুপে অকেজো হতে পারে অথবা আপনার বাচ্চা স্পেশাল হতে পারে। সেক্ষেত্রে আপনি হেলদি বাচ্চা আশা করতে পারেন না।
প্রেগন্যান্সিকালীন সময়ে আপনার যদি হাইপারথাইরয়েডিজম বা হাইপোথাইরয়েডিজম দেখা দেয়, আর আপনি যদি সেটার সঠিক চিকিৎসা না করেন তাহলেও সেইম প্রব্লেম হতে পারে। এক্ষেত্রেও আপনি হেলদি বাচ্চা আশা করতে পারেন না।
মা যদি সুস্থ না থাকে তাহলে কিন্তু বাচ্চা জন্মের পর মায়ের বুকের দুধও ঠিকমত পাবে না, বা একেবারেই পাবে না। যেটা বাচ্চার বেড়ে ওঠার জন্য অপরিহার্য।
তাই বাচ্চার আগে মায়ের যত্ন নিন। মায়ের স্বাস্থ্যের ব্যাপারে সচেতন হোন। প্রয়োজনে অবশ্যই আপনার পুষ্টিবিদের পরামর্শ নিন।
পুষ্টিবিদ মোঃ ইকবাল হোসেন
চেম্বারঃ
সার্জিস্কোপ হাসপাতাল, ইউনিট-২, কাতালগঞ্জ, চট্টগ্রাম। প্রতি শুক্রবার থেকে বুধবার, সন্ধ্যা ৭ঃ০০ টা থেকে রাত ১০ঃ০০ টা পর্যন্ত।
সিরিয়ালের জন্যঃ ০১৭৬৪-৭৮৬৭৫৩
অনলাইন সেবা পাওয়ার জন্য
হোয়াটস এ্যাপ নম্বর-01533843123
লেখকের সাথে যোগাযোগ করতে নিচের ফেসবুক পেইজে ক্লিক করুন
www.facebook.com/Nutritionist.Iqbal