গর্ভাবস্থায় আমরা সবাই প্রথম থেকেই চিন্তায় পড়ে যাই আমার নরমাল ডেলিভারি হবে না কি সিজার করতে হবে তা নিয়ে। আসলে নরমাল ডেলিভারি হবে কি না তা অনেক কিছুর উপর করে। এর একটা অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল প্রেগ্ন্যাসির শেষ পর্যায়ে আপনার বেবির প্রেজেন্টেশন। আজ আমরা এখানে এ ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা করবো।
আপনার জরায়ুতে শিশু যে অবস্থানে থাকে তাকে 'ফিটাল প্রেজেন্টেশন' বলা হয়। পুরো গর্ভাবস্থায় আপনার শিশু জরায়ুতে ঘোরাফেরা করবে। গর্ভাবস্থার বেশিরভাগ সময় আপনার শিশুটি বিভিন্ন অবস্থানে থাকা স্বাভাবিক। প্রথমদিকে, শিশুটি যথেষ্ট ছোট বলে অবাধে চলাচল করতে পারে। গর্ভাবস্থার শেষ কয়েক মাস ধরে আপনি এই আন্দোলনটি অনুভব করে থাকতে পারেন। বাচ্চা যত বড় হবে বেবির চলাচলও তত সীমাবদ্ধ হবে। আপনি তখন তুলনামূলক কম নড়াচড়া বুঝবেন।প্রেগন্যান্সির শেষের দিকে, শিশুটি জন্মের জন্য পজিশনে যেতে শুরু করবে। সাধারণত শিশুটি মাথা নীচু করে আপনার জরায়ুতে নীচে নামতে শুরু করবে, প্রসবের সময় আপনার বার্থ ক্যানেল দিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নিবে।
বার্থ ক্যানেলটি জরায়ুর সার্ভাইকেল ক্যানেল, যোনি এবং ভালভা দিয়ে তৈরি। বার্থ ক্যানেলকে একটি প্রসারণযোগ্য টানেল হিসাবে ভাবেন। লেবারের সময়, আপনার জরায়ুর সংকোচনগুলি এই স্থানটিকে প্রসারিত করতে কাজ করে যাতে বাচ্চা প্রসবের সময় এটির মধ্য দিয়ে যেতে পারে।
আদর্শভাবে লেবারের (Labor) জন্য, শিশুটি মাথা নীচু করে অবস্থান করে, মায়ের পেছনের দিকে মুখ করে, থুতুনি বুকে স্পর্শ করে থাকে এবং মাথার পেছনের অংশটি পেলভিস বা শ্রোণীতে প্রবেশের জন্য প্রস্তুত থাকে। এই অবস্থানকে বলা হয় সেফালিক প্রেজেন্টেশন (চিত্র- ১)। বেশিরভাগ শিশু গর্ভাবস্থার ৩২ থেকে ৩৬ তম সপ্তাহের মধ্যে এই অবস্থানে স্থির হয়। কখনও কখনও বাচ্চা জন্মের আগে নিখুঁত অবস্থানে (সেফালিক প্রেজেন্টেশন) যায় না। সেফালিক প্রেজেন্টেশন ছাড়াও আরও বেশ কয়েকটি অবস্থান রয়েছে যার যে কোনটিতে শিশুটি থাকতে পারে এবং এগুলির প্রতিটি অবস্থানই প্রসবের সময় জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে।
এই প্রেজেন্টেশনগুলো হলঃ
১
অক্সিপুট বা সেফালিক পোস্টেরিয়র পজিশন (Occiput or Cephalic posterior position): এখানে বেবির মাথা ঠিকই নীচে থাকে কিন্তু মুখমণ্ডল মায়ের পেটের দিকে মুখ করে থাকে। এই ধরনের প্রেজেন্টেশনকে সানি সাইড-আপ (Sunny side-up) পজিশনও বলে। এই পজিশন ব্যথাযুক্ত দীর্ঘ ডেলিভারির চান্স বাড়িয়ে দিতে পারে।
২
Frank Breech presentation: এই অবস্থায় বেবির পাছা (buttock) বার্থ ক্যানেলে চলে আসে, পা দুটি বাচ্চার পেটের সাথে লেগে থাকে। এই পজিশনে বাচ্চার আম্বিলিকাল কর্ড বা নাড়ি প্যাঁচ খেতে পারে এবং নরমাল ভেজাইনাল ডেলিভারি করতে চাইলে বেবি ইঞ্জুরড হতে পারে।
৩
সম্পূর্ণ ব্রীচ প্রেজেন্টেশন ( Complete Breech Presentation): এই অবস্থানে,শিশুটির বাটক বা পাছা নীচের দিকে থাকে, সাথে পা দুটি ভাঁজ করে একসাথে থাকে। অন্যান্য ব্রীচ প্রেজেন্টেশন মতো, এই অবস্থানটি একটি নাভির লুপ গঠনের ঝুঁকি বাড়ায় যা জরায়ুর মুখের মাধ্যমে বেবির মাথার আগে চলে আসতে পারে এবং যোনিপথে ডেলিভারি করলে শিশুটিকে আহত করতে পারে।
Footling breech (ফুটলিং ব্রীচ)ঃ কখনও কখনও, বাচ্চার উভয় বা যে কোন একটি পা বার্থ ক্যানেলর দিকে চলে আসে। এটি জরায়ুমুখ দিয়ে আম্বিলিকাল কর্ড নীচে নেমে আসা এবং শিশুর শরীরে রক্ত সরবরাহ বন্ধ করার সম্ভাবনা বৃদ্ধি করে।
ট্রান্সভার্স লাই (Transverse lie): এই পজিশনে বাচ্চা জরায়ুতে লম্বালম্বি ভাবে না থেকে হরিজন্টাল বা আড়াআড়ি ভাবে অবিস্থান করে । এই পজিশনে বাচ্চার পৃষ্ঠদেশ বা কোন একটি কাধ অথবা হাত পা বার্থ ক্যানেলের দিকে মুখ করে থাকে। এই ধরনের প্রেজেন্টেশনে সি- সেকশন ছাড়া ডেলিভারি প্রায়ই অসম্ভব।
সন্তানের জন্মের সময়, আপনার চিকিৎসক এবং তাঁর টিমের লক্ষ্য হ'ল নিরাপদে আপনার শিশুকে ডেলিভারি করা এবং আপনার সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করা। যদি শিশুটি সেফালিক প্রেজেন্টেশন ছাড়া অন্য কোন অবস্থানে থাকে তবে এই কাজটি আরও চ্যালেঞ্জের এবং ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠে। বিভিন্ন ভ্রূণের অবস্থানের অনেকগুলি অসুবিধা থাকে এবং আপনার সন্তানের অবস্থানের উপর নির্ভর করে ঝুঁকিগুলি ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে। কাজেই আপনার নরমাল ডেলিভারি করতে চাইলে কোন ঝুঁকি আছে কি না তা জেনে নেওয়া উচিত। প্রেগ্ন্যাসির ৩৬ সপ্তাহ হলে আল্ট্রাসনোগ্রামের মাধ্যমে সঠিক পজিশন বা বেবির সর্বশেষ প্রেজেন্টেশন জেনে নিতে হবে যাতে মা ও অনাগত শিশুর নরমাল ডেলিভারি সময় কোন প্রকার ঝুঁকি না থাকে।
লেখক
ডাঃ সরওয়াত আফরিনা আক্তার (রুমা)
MBBS,MSc(Australia),FCGP,CMU,DMU,
Advanced Training on TVS,Fetal Echo,Anomaly Scan,Paediatric Ultrasound,Musculoskeletal Ultrasound,
Duplex Doppler,Infertility & Gynae Ultrasound,From Dhaka,Mumbai,
Channai, Delhi, Gujarat.
Consultant Sonologist
Aalok HeathCare Ltd.
ঠিকানাঃ
Ruma's Ultrasound
* আলোক হেলথকেয়ার লি.
প্রধান শাখা, মিরপুর ১০, ঢাকা ১২১৬।
সময়ঃ সকাল ৮.০০ টা থেকে দুপুর ৩.০০ টা পর্যন্ত।
* আলোক হেলথকেয়ার লি.
৩য় শাখা, আলবা টাওয়ার
মিরপুর ১১.৫, ঢাকা ১২১৬।
সময়ঃ সন্ধ্যা ৬.০০ টা থেকে রাত্র ১১.০০ টা পর্যন্ত। (শুক্রবার বিকাল বন্ধ)
এপয়েন্টমেন্ট এর জন্য
+8801892696007 (শুধু মাত্র আল্ট্রাসনোগ্রামের জন্য)
লেখকের সাথে যোগাযোগ করতে নিচের ফেসবুক পেইজে ক্লিক করুন
www.facebook.com/Rumas-Ultrasound-109856337478413