গর্ভপাত বা মিসকারেজ হল এমন একটি ঘটনা যেখানে গর্ভাবস্থার ২০ সপ্তাহের আগে ভ্রূণ বা অনাগত বেবি নষ্ট হয়ে যায়। এটি সাধারণত গর্ভাবস্থার প্রথম ত্রৈমাসিকে বা প্রথম তিন মাসের মধ্যে ঘটে থাকে।
গর্ভপাত বিভিন্ন স্বাস্থ্যগত কারণে ঘটতে পারে, যার বেশিরভাগই আমাদের নিয়ন্ত্রণে থাকে না। তবু্ও এর রিস্ক ফেক্টরসমূহ, লক্ষণ এবং কারণগুলি জানলে আপনি ইভেন্টটি আরও ভালভাবে বুঝতে পারবেন এবং ভবিষ্যতে আপনার বা আপনার পরিবারের প্রয়োজনে যথাযথ উদ্যোগ নিতে পারবেন।
গর্ভপাত বা মিসকারেজ এর লক্ষণসমূহঃ
- ভারী স্পটিং (heavy spotting).
- যোনি পথে রক্তপাত (Vaginal bleeding)
- তীব্র পেট ব্যথা বা ক্র্যাম্পিং
- হালকা থেকে গুরুতর কোমড় ব্যথা
আপনি যদি গর্ভাবস্থায় এই লক্ষণগুলির কোনটিও অনুভব করেন তবে অবিলম্বে আপনার চিকিৎসকের সাথে যোগাযোগ করুন। কারও কারও ক্ষেত্রে গর্ভপাত ছাড়াও এই সব লক্ষ্মণ পরিলক্ষিত হতে পারে।
মিসকারেজ বা গর্ভপাতের ধরনঃ
১. সম্পূর্ণ গর্ভপাত (Complete abortion or miscarraige): এ ক্ষেত্রে গর্ভাবস্থার সমস্ত টিস্যু জরায়ু থেকে বেরিয়ে যাবে।
২. অসম্পূর্ণ গর্ভপাত (Incomplete miscarraige or abortion): আপনি কিছু টিস্যু বা প্লাসেন্টাল উপাদান পাস করেছেন তবে কিছু এখনও আপনার জরায়ুতে থেকে গেছে।
৩.মিসড গর্ভপাত (Missed abortion): এখানে ভ্রূণ আপনার অজান্তেই মারা যায় কিন্তু এটি এখনো আপনার জরায়ু থেকে বেরিয়ে আসেনি।
৪. থ্রেটেন্ড গর্ভপাত (Threatened abortion): রক্তক্ষরণ এবং ক্র্যাম্পিং পেইন সম্ভাব্য আসন্ন গর্ভপাতকে নির্দেশ করে।
৫. অনিবার্য গর্ভপাত (Inevitable abortion) রক্তপাত (bleeding), ক্র্যাম্পিং এবং জরায়ুর মুখ খুলে যাওয়া ইঙ্গিত দেয় যে গর্ভপাত অনিবার্য।
৬. সেপ্টিক গর্ভপাত: এখানে জরায়ুতে সংক্রমণ (Infection) দেখা দেয়। এতে গর্ভপাত হয়ে যায়।
মিসকারেজ এর কারণসমূহঃ
মূলতঃ বেবি সঠিক ভাবে ডেভেলপ না হয়ে থাকার কারণে মিসকারেজ হয়। যে সব কারণে মিসকারেজ হয় তার মধ্যে রয়েছে-
১. জেনেটিক বা ক্রোমোজোমাল ইস্যু। এখানে ক্রোমোজোমাল অস্বাভাবিকা থাকে। যেমন-
- ইন্ট্রাইটেরাইন ফিটাল ডিমাইজ (Intrauterine fetal demise) এখানে প্রেগ্ন্যাসির লক্ষ্মণ প্রকাশিত হওয়ার পূর্বেই এম্ব্রাইও( Embryo) নষ্ট হয়ে যায়।
- ব্লাইটেড ওভাম (Blighted ovum) - এখানে এম্ব্রাইও ই তৈরি হয় না।
- মোলার প্রেগ্ন্যাসি (Molar pregnancy)
- আংশিক মোলার প্রেগ্ন্যাসি
২. শারীরিক কন্ডিশন ও জীবনধারা অভ্যাস
বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা এবং জীবনধারা সম্পর্কিত অভ্যাস ভ্রূণের বিকাশে বাধা দিতে পারে। তবে ব্যায়াম এবং যৌন মিলনের ফলে গর্ভপাত হয় না। ক্ষতিকারক রাসায়নিক বা রেডিয়েশনের সংস্পর্শে না এলে দৈনন্দিন কাজ কর্ম ভ্রূণের উপর কোন প্রভাব ফেলে না।
ভ্রূণের বিকাশ বাধাগ্রস্থ করতে পারে যে সব কন্ডিশন, তার মধ্যে রয়েছে:
- দুর্বল ডায়েট, বা অপুষ্টি
- ড্রাগ এবং অ্যালকোহল ব্যবহার
- বেশি বয়সে মা হওয়া
- অনিয়ন্ত্রিত থাইরয়েড রোগ
- অন্যান্য হরমোনজনিত সমস্যা
- অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস
- সংক্রমণ
- ট্রমা
- স্থূলতা বা obesity
- অস্বাভাবিক আকারের জরায়ু
- মারাত্মক উচ্চ রক্তচাপ
- খাদ্যে বিষক্রিয়া
-নির্দিষ্ট কিছু ঔষধ
গর্ভাবস্থার প্রথম দিকে প্রেগ্ন্যান্সি লস বা মিসকারেজ একটি সাধারণ ঘটনা। আমেরিকান কলেজ অব অবস্টেট্রিশিয়ানস অ্যান্ড গাইনোকোলজিস্ট এর (এসিওজি) মতে, এই মিসকারেজের হার জ্ঞাত গর্ভধারণের প্রায় ১০%।
কখনও কখনও গর্ভপাতের কারণ অজানা থেকে যায়। তবে মায়ো ক্লিনিক (Myo Clinic) এর হিসাব অনুযায়ী প্রায় ৫০ শতাংশ গর্ভপাত ক্রোমোজোমের অস্বাভাবিকতার কারণে হয়ে থাকে।
বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে গর্ভপাতের ঝুঁকিও বেড়ে যায়। মায়ো ক্লিনিকের হিসাব অনুসারে, ৩৫ বছর বয়সে গর্ভপাতের ঝুঁকি ২০ শতাংশ, ৪০ বছর বয়সে এটি ৪০ শতাংশ এবং ৪৫ বছর বয়সে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৮০ শতাংশে।গর্ভপাতের অর্থ এই নয় যে আপনার আর সুস্থ সবল বাচ্চা হবে না। ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিক ( Cleveland Clinic) অনুসারে, গর্ভপাত হওয়া ৮৭ শতাংশ মহিলাই পরবর্তীতে পুরো মেয়াদ গর্ভধারণ করে এবং সুস্থ সবল বেবি জন্ম দিয়ে থাকেন। মাত্র ১ শতাংশ মহিলার তিন বা ততোধিক গর্ভপাত হয়।
শত চেষ্টা করেও সব গর্ভপাত আটকানো সম্ভব না । তবে, একটি স্বাস্থ্যকর গর্ভাবস্থা বজায় রাখতে পারলে অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভপাত প্রতিরোধ করা সম্ভব। আপনাদের জন্য কিছু রিকমেন্ডেশন দেওয়া হলঃ
- আপনার পুরো গর্ভাবস্থায় নিয়মিত প্রসবপূর্ব যত্ন (antenatal care) নিন।
- গর্ভবতী হওয়ার সময় অ্যালকোহল, ড্রাগ এবং ধূমপান এড়িয়ে চলুন।
- গর্ভাবস্থার আগে এবং সময় একটি স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখুন।
- সংক্রমণ এড়ান। আপনার হাত ভালভাবে ধুয়ে নিন এবং ইতিমধ্যে অসুস্থ ব্যক্তিদের থেকে দূরে থাকুন।
- ক্যাফিনের পরিমাণ প্রতিদিন ২০০ মিলিগ্রামের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখুন।
- আপনার এবং আপনার গর্ভস্থ ভ্রূণ যাতে পর্যাপ্ত পুষ্টি পেতে পারে তা নিশ্চিত করতে প্রসবপূর্ব ভিটামিন নিন।
- প্রচুর ফলমূল এবং শাকসব্জীসহ স্বাস্থ্যকর, সুষম খাদ্য গ্রহণ করুন।
লেখক
ডাঃ সরওয়াত আফরিনা আক্তার (রুমা)
MBBS,MSc(Australia),FCGP,CMU,DMU,Advanced Training on TVS,Fetal Echo,Anomaly Scan,Paediatric Ultrasound,Musculoskeletal Ultrasound, Duplex Doppler,Infertility & Gynae Ultrasound,From Dhaka,Mumbai, Channai, Delhi, Gujarat.
Consultant Sonologist
Aalok HeathCare Ltd.
ঠিকানাঃ
Ruma's Ultrasound
* আলোক হেলথকেয়ার লি.
প্রধান শাখা, মিরপুর ১০, ঢাকা ১২১৬।
সময়ঃ সকাল ৮.০০ টা থেকে দুপুর ৩.০০ টা পর্যন্ত।
* আলোক হেলথকেয়ার লি.
৩য় শাখা, আলবা টাওয়ার
মিরপুর ১১.৫, ঢাকা ১২১৬।
সময়ঃ সন্ধ্যা ৬.০০ টা থেকে রাত্র ১১.০০ টা পর্যন্ত। (শুক্রবার বিকাল বন্ধ)
এপয়েন্টমেন্ট এর জন্য
+8801892696007 (শুধু মাত্র আল্ট্রাসনোগ্রামের জন্য)
www.facebook.com/Rumas-Ultrasound-109856337478413