-
পরীক্ষার হলে টেনশন,হঠাৎ মনে হলো ঘাড়টা ভার হয়ে এসেছে,চোখ ঝাপসা,অস্বস্তি বোধ।এমনটা ছাত্র বয়সেও হতে পারে।একে বলে হাইপ্রেশার বা উচ্চ রক্তচাপ।
কিভাবে বুঝবেন আপনি হাইপারটেনশনে আক্রান্ত
প্রথমেই আপনাকে জানতে হবে,উপরে ও নিচে রক্তের আদর্শ মাত্রা। সিস্টোলিক চাপ ওপরে এবং ডায়াস্টোলিক চাপ নিচে লিখে রক্তচাপ প্রকাশ করা হয়।
হৃৎপিণ্ডের সংকোচণের কারণে মানুষের ধমনি ও শিরায় রক্তের চাপ সৃষ্টি হয়।এর ফলে যে চাপ অনুভূত হয় তাকে সিস্টোলিক চাপ বলে।
আবার হৃৎপিণ্ডের প্রসারণের ফলে যে চাপ অনুভূত হয় তাকে ডায়াস্টোলিক চাপ বলে।
মানুষের শরীরে আদর্শ রক্তচাপ ১২০/৮০ মি.মি.(mm Hg)
কারো রক্তচাপ যদি উভয় বাহুতে ১৪০/৯০ মি.মি. (mm Hg) বা তার ওপরে থাকে, তাহলে একে হাইপারটেনশন HTN অথবা উচ্চরক্তচাপ।
মাপার আগে কিছু বিষয় খেয়াল রাখতে হবে
এক সপ্তাহের বিরতিতে কমপক্ষে তিনবার মাপতে হবে। সঠিক চাপ নির্ণয়ের জন্য কয়েকটি বিষয়
যেমন দুশ্চিন্তামুক্ত অবস্থায় মাপতে হবে
কমপক্ষে পাঁচ মিনিট সময় বসা অবস্থায় থাকতে হবে।
উচ্চ রক্তচাপের লক্ষণ
-
এক
অস্বস্তি বোধ করা
-
দুই
নিয়মিত বা অতিরিক্ত মাথা ব্যথা
-
তিন
ঘাড়ে ব্যথা
-
চার
চোখে ঝাপসা দেখা
-
পাঁচ
নিঃশ্বাসের দুর্বলতা
-
ছয়
নাক দিয়ে রক্ত পড়া
-
সাত
অনিদ্রা
-
আট
বুক ব্যাথা
-
নয়
প্রস্রাবে রক্ত
উচ্চ রক্তচাপের কারণ
-
ক
অতিরিক্ত কাজের চাপ
-
খ
অতিরিক্ত মদ্যপান
-
গ
উচ্চমাত্রার লবণের ব্যবহারের
-
ঘ
মেদ
-
ঙ
বেশী আওয়াজ
-
চ
ঘিঞ্জি পরিবেশ
-
ছ
গর্ভধারণের কারণে
উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি কাদের
-
এক
বয়স
আপনার বয়স বাড়ার সাথে সাথে রক্তবাহকের স্থিতিস্থাপকতা কমার এবং হরমোনাল পরিবর্তনের জন্য উচ্চ রক্তচাপের সম্ভবনা বারে।
-
দুই
জেনেটিক্স
উচ্চ রক্তচাপের পিছনে আপনার পরিবারের ইতিহাস গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে।
উচ্চ রক্তচাপের দীর্ঘ মেয়াদী কিছু পরিণতি অন্তর্ভুক্ত
-
ক
স্ট্রোক
-
খ
হার্ট অ্যাটাক
-
গ
হার্ট ফেলিওর
-
ঘ
ভাস্কুলার ডিমেনশিয়া
-
ঙ
অ্যানিউরিজম
-
চ
কিডনি
-
ছ
দৃষ্টিশক্তির ক্ষয়
স্ট্যান্ডার্ড ড্যাস ডায়েটে প্রতিদিন সোডিয়াম গ্রহণের পরিমাণ ২,৩০০ মিলিগ্রামের চেয়ে কম রাখার জন্য ডায়েটরি গাইডলাইনসে পরামর্শ দেন।আবার আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশন সমস্ত প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য উচ্চতর সীমা হিসাবে একদিনে ১৫০০মিলিগ্রাম সোডিয়ামের প্রস্তাব দেয়। যদি আপনি বুজতে না পারেন আপনি আপনার খাবারে কতটুকু সোডিয়াম খাচ্ছেন তাহলে বিশেষজ্ঞএর পরামর্শ নিবেন।
-
ছ
লবণ সোডিয়ামের খুব ভালো উৎস। প্রতিদিন রান্নায় চার থেকে পাঁচ গ্রাম (১ চা চামচ ৫ গ্রাম) পর্যন্ত লবণ ব্যবহার করা ভালো।তবে খাবারের সময় আলাদা লবণ পরিহার করতে হবে।
এবার কী কী খাবার খাবেন তা নিয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনা
-
এক
রসুন
পর্যালোচনা থেকে দেখা যায় যে রসুন দেহে নাইট্রিক অক্সাইডের পরিমাণ বাড়িয়ে হাইপারটেনশন হ্রাস করতে সহায়তা করে।প্রতিদিন একটি করে রসুন গ্রহণ করুন।
-
দুই
ডাবের পানি
ডাবের পানিতে রয়েছে পটাশিয়াম, সোডিয়াম, ক্যালশিয়াম, ভিটামিন সি ও অন্যান্য নিউট্রিয়েন্টস যা উচ্চ রক্তচাপ কমিয়ে ফেলতে সাহায্য করে।
-
তিন
পাকা কলা
অতি জনপ্রিয় সুস্বাদু ও পুষ্টিকর ফল কলা, যা সারাবছরই পাওয়া যায়। একটি পাকা কলায় ৩৫৮ মিলিগ্রাম পটাসিয়াম থাকে। যা দেহের রক্তের হিমোগ্লোবিন বাড়িয়ে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে। এজন্য একটি করে প্রতিদিন পাকা কলা খাওয়া উচিত।
-
চার
সবুজ শাকসবজী
পটাসিয়াম আপনার কিডনিগুলি আপনার মূত্রের মাধ্যমে আরও সোডিয়াম থেকে মুক্তি পেতে সহায়তা করে। ফলস্বরূপ এটি আপনার রক্তচাপকে হ্রাস করে।তাই যেসব সবজিতে পটাসিয়ামের পরিমান বেশি তা হচ্ছে
-
ক
লেটুস
-
খ
পাতা কপি
-
গ
পালংশাক
-
ঘ
শালগম
-
ঙ
সবুজ শাক
-
দশ
ধনেপাতা ইত্যাদি
-
এগার
ওমেগা ৩
সামুদ্রিক মাছ যেমন ম্যাকেরেল এবং স্যামন,টুনা হচ্ছে ওমেগা৩ এর দারুণ উৎস যা উচ্চ রক্তচাপকে হ্রাস করতে পারে এবং ট্রাইগ্লিসারাইড কমিয়ে দিতে পারে।এছাড়াও বাদাম,আখরোট ইত্যাদি থেকেও ওমেগা৩ পাবেন।
-
বার
দই
আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশনের মতে, যে মহিলারা এক সপ্তাহে পাঁচ বা তার বেশি দই খেয়েছিলেন তারা উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকিতে ২০ শতাংশ হ্রাস পেয়েছিলেন।দই কেনার সময় অবশ্যই চিনি ছাড়া কিনবেন।
-
তের
বীজ
প্রতিদিন ১০ থেকে ১৫ টি সূর্যমুখী, কুমড়োর বীজ আপনার রক্তচাপকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।কারন বীজে রক্তচাপ কমাতে পরিচিত পটাসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম এবং অন্যান্য খনিজগুলির পরিমাণ বেশি থাকে।তবে লবণ দিয়ে খাবেন না।
এছাড়াও সাইট্রাসযুক্তফল যেমন লেবু,কমলা,মালটা,তেঁতুল ইত্যাদিও উচ্চরক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে।
এবার কিছু নিয়ম বা টিপস
-
ক
লবণ খাওয়া কমাতে হবে।
-
খ
অতিরিক্ত ওজন কমাতে হবে।
-
গ
অবশ্যই নিজে নিজে গুগল দেখে ডায়েট করা যাবেনা।
-
ঘ
গরুর মাংস পরিহার করা উত্তম।
-
ঙ
প্রতিদিন একটি ডিম খেতে পারবেন।
-
চ
ড্যাশ ডায়েট খুবই ভালো,কিন্তু তা হতে হবে ডায়েটিশিয়ানের পরামর্শ অনুযায়ী।
-
ছ
৬ থেকে ৭ ঘন্টা ঘুমাতে হবে।
-
জ
নিয়মিতো ব্যায়াম করতে হবে।
-
ঝ
ধূমপান,আ্যলকোহল বর্জন করতে হবে।
-
ঞ
চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ঔষধ গ্রহণ করুন।
পরিশেষে বলবো স্ট্রেস নেয়া যাবেনা।মনে রাখবেন জীবন অল্প দিনের।অতিরিক্ত টেনশন করে সুন্দর জীবনকে ধ্বংস করার মত বোকামি আর এ দুনিয়াতে নেই।সুস্থ থাকুন সাথে ডায়েটিশিয়ানকে পাশে রাখুন।
Dietitian Shirajam Munira
কনসালটেন্ট ইবনেসিনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও কেয়ার মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল
ডায়েটিশিয়ান সিরাজাম মুনিরা |
হঠাৎ উচ্চ রক্তচাপ ? জেনে নিন উচ্চ রক্তচাপ এর কারণ ও করনীয় |
উচ্চ রক্তচাপ |
- royalbangla.com এ আপনার লেখা বা মতামত বা পরামর্শ পাঠাতে পারেন এই এ্যড্রেসে [email protected]
পরবর্তী পোস্ট |
ইউরিন ইনফেকশন: কারণ ও প্রতিরোধের উপায় |