২৯ অক্টোবর বিশ্ব স্ট্রোক দিবস। এবারের বিশ্ব স্ট্রোক দিবসের স্লোগান ‘ওয়ান ইন ফোর অব আস উইল হ্যাভ স্ট্রোক ডোন্ট বি দা ওয়ান’ (প্রতি ৪ জনে ১ জন স্ট্রোক আক্রান্ত হবেন, সেই ১ জন যেন হতে না হয়)।
সম্প্রতি কয়েকজন তরুণের মৃত্য সংবাদ আমাকে স্তম্ভিত করেছে। সবার বয়স ২৫-৩৫ এর মধ্যে। শেষ যে খবরটা শুনলাম, সেই ছেলেটা সদ্য চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনার পার্ট চুকিয়ে চাকরীতে জয়েন করেছে। বাড়ি খুলনাতে। একটা মৃত্যুর সাথে সাথে মৃত্যু হয়েছে ঐ পরিবারের হাজারটা স্বপ্নের। প্রতিটা মৃত্যুর কারন ছিল স্ট্রোক । এই বয়সে স্ট্রোক!!! কল্পনা করা যায়?? কিন্তু সেটাই হয়েছে। আগে বলা হত যে, ৫০+ বয়স্ক মানুষের স্ট্রোকের ঝুকি থাকে। কিন্তু এখন আর সে কথা খাটছে না। চোখের সামনে স্ট্রোকে হারিয়ে যাচ্ছে এমন তরতাজা সব প্রান।
স্ট্রোক কি?
মস্তিষ্ক আমাদের দেহের সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। এটি একটি সংবেদনশীল অঙ্গ। এতে ছোট-বড় অসংখ্য রক্তনালী দ্বারা রক্ত সংবহিত হয়। এর মাধ্যমে মস্তিষ্ক পুষ্টি পদার্থ গ্রহণ করে তার স্বাভাবিক ক্রিয়া পরিচালনা করে। কিন্তু কোনো কারণে যদি আমাদের মস্তিষ্কের অভ্যন্তরে রক্ত প্রবাহে ব্যাঘাত ঘটে, সেক্ষেত্র রক্তনালী বন্ধ হয়ে যেতে পারে বা ছিড়ে যেতে পারে, তাহলে যে অবস্থার সৃষ্টি হয়, তাকে স্ট্রোক বলে। সাধারণত দুই ধরনের স্ট্রোক হয়ে থাকে-
১. ইসকেমিক স্ট্রোক: এ ধরনের স্ট্রোকে মস্তিষ্কের রক্তনালীর অভ্যন্তরে রক্ত জমাট বেঁধে যায়। ফলে ওই রক্তনালী দিয়ে মস্তিষ্কের নির্দিষ্ট অংশে রক্ত প্রবাহিত হতে পারে না। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এই ধরনের স্ট্রোক দেখা যায়।
২. হেমোরেজিক স্ট্রোক: এ ধরনের স্ট্রোকে মস্তিষ্কের রক্তনালী ছিঁড়ে যায় এবং রক্তপাত হয়। এ ধরনের স্ট্রোক তুলনামূলকভাবে বেশি মারাত্মক।
স্ট্রোকের লক্ষণঃ
দুই ধরনের স্ট্রোকেই প্রায় একই ধরনের লক্ষণ এবং উপসর্গ থাকতে পারে, এগুলো হলো-
১) হাত-পা অবশ হয়ে যাওয়া
২) শরীরের একপাশ অবশ হয়ে যাওয়া
৩) অজ্ঞান হয়ে যাওয়া
৪) মুখ বেঁকে যাওয়া
৫) হাসলে মুখ অন্য পাশে চলে যাওয়া
৬) কথা বলতে না পারা
৭) কথা জড়িয়ে যাওয়া
৭) হঠাৎ চোখে না দেখা বা ঝাপসা দেখা
৮) বমি বমি ভাব বা বমি
৯) চোখে একটি জিনিস দুটি দেখা
১০) প্রচণ্ড মাথাব্যথা প্রভৃতি।
অনেকের ক্ষেত্রে এই লক্ষণ-উপসর্গগুলো হঠাৎ দেখা দেয় আবার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তা আপনা-আপনি ভালো হয়ে যায়। একে ট্রানজিয়েন্ট ইসকেমিক অ্যাটাক বলে।। এটিও একধরনের স্ট্রোক, তবে মিনি স্ট্রোক। মনে রাখতে হবে যে, এই মিনি স্ট্রোক হচ্ছে বড় ধরনের স্ট্রোকের পূর্ব লক্ষণ।
ঝুঁকিপূর্ণ কারণঃ
১) উচ্চ রক্তচাপ
২) অনিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাস
৪) অতিরিক্ত ওজন
৫) ধূমপান
৬) মদ্যপান
৭) রক্তে বেশি মাত্রায় কোলেস্টেরল
৮) পারিবারিক ইতিহাস প্রভৃতি
৯) অলস জীবনযাপন
১০) পর্যাপ্ত ঘুম না হওয়া
জটিলতা
স্ট্রোকের ফলে সৃষ্ট অনেকগুলো জটিলতার মধ্যে প্যারালাইসিস অন্যতম। শ্বাসযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে রোগীর মৃত্যু ঘটে। তবে, সঠিক সময়ে চিকিৎসা গ্রহণের মাধ্যমে এসব জটিলতা কিছুটা পরিহার বা কমিয়ে আনা যায়।
প্রতিরোধ
বলা হয়, প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধ উত্তম। নিচের বিষয়গুলো মেনে চলার মাধ্যমে সহজেই স্ট্রোক প্রতিরোধ করতে পারি।
১)নিয়মিত ব্যায়াম
২)শরীরের অতিরিক্ত ওজন কমানো
৩) নিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাস
৪) ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ
৫) উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ
৭) আঁশ সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ
৮) পরিমিত মাত্রায় লবণ গ্রহণ
৯) ভাজাপোড়া খাবার এড়িয়ে চলা প্রভৃতি।
১০) পর্যাপ্ত ঘুমানো
চিকিৎসাঃ
স্ট্রোক হলে যত দ্রুত সম্ভব রোগীকে হাসপাতালে নিতে হবে। মনে রাখতে হবে, রোগী যত তাড়াতাড়ি চিকিৎসা পাবে, জটিলতার ঝুঁকি তত কমে যাবে। স্ট্রোকের চিকিৎসা সাধারণত দুটি পর্যায়ে বিভক্ত। স্ট্রোকের তাৎক্ষণিক চিকিৎসা এবং প্যারালাইসিস (যদি হয়) এর চিকিৎসা। হাসপাতালে তাৎক্ষণিক চিকিৎসার সময় বা অল্প কিছুদিন পর প্যারালাইসিসের চিকিৎসা নিতে হয়। চিকিৎসার দ্বিতীয় পর্যায়টি ফিজিক্যাল মেডিসিন বিভাগ করে থাকে। বিভিন্ন ধরনের ব্যায়াম এবং ফিজিওথেরাপির মাধ্যমে এই চিকিৎসা করা হয়। এই চিকিৎসাকে স্ট্রোক পরবর্তী পুনর্বাসন ও বলে।
এই লেখকের সব লেখা পড়ুন নিচের লিংক থেকে।
www.royalbangla.com/Nutritionist.Iqbal
সুস্থ থাকুন ভাল থাকুন।
লেখক
পুষ্টিবিদ মোঃ ইকবাল হোসেন
বিএসসি (সম্মান), এমএসসি (প্রথম শ্রেণী)
(ফলিত পুষ্টি ও খাদ্য প্রযুক্তি)
পুষ্টি কর্মকর্তা
চট্টগ্রাম ডায়াবেটিক জেনারেল হাসপাতাল
জাকির হোসেন রোড, খুলশি।
চট্টগ্রাম।
চেম্বারঃ সার্জিস্কোপ হাসপাতাল, ইউনিট-২,
কাতালগঞ্জ, চট্টগ্রাম।
প্রতিদিন সন্ধ্যা ৫ঃ৩০-৮ঃ০০ টা
চেম্বারঃ হাটহাজারী ডিজিটাল ডায়াগনস্টিক সেন্টার,
হাটহাজারী, চট্টগ্রাম।
প্রতি বুধবার বিকাল ৩ টা থেকে ৫ টা পর্যন্ত।
Update 03/08/2024