বয়ঃসন্ধি কাল থেকেই আজকাল প্রায় প্রতিটা মেয়ের সমস্যাই পলিসিস্টিক ওভারি। পলিসিস্টিক ওভারির ক্ষেত্রে প্রধানত দুটি সমস্যা হয়, একটি পি সি ও ডি ও আরেকটি পি সি ও এস। সুষম খাদ্যের ক্ষেত্রে বলব স্ট্রিক্ট ডায়েটিং কিন্তু কখনোই রেকোমেনডেড নয়।
পলিসিস্টিক ওভারি
বয়ঃসন্ধি কাল থেকেই আজকাল প্রায় প্রতিটা মেয়ের সমস্যাই পলিসিস্টিক ওভারি। অত্যাধিক ফাস্ট ফুড খাওয়া, সেডেন্টারি জীবন যাত্রাই এর প্রধান কারণ। এছাড়া হরমোনাল কিছু অসামঞ্জস্যতা তো আছেই। এরকম অনেক সময়তেই হয় যে পরীক্ষা না করানোর জন্য জানতেই পারা যায় না এরকম কোন সমস্যা শরীরে আছে, যদিও এর বেশ কিছু উপসর্গ আছে যা দেখে প্রথম অবস্থাতেই জানা যেতে পারে।
পলিসিস্টিক ওভারির ক্ষেত্রে প্রধানত দুটি সমস্যা হয়, একটি পি সি ও ডি ও আরেকটি পি সি ও এস। এই দুটির উপসর্গ বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এক হলেও কারণ কিন্তু আলাদা। পিসি ও ডি পলিসিস্টিক ওভারি তে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এটি দেখা যায়, যা প্রধানত হরমোনাল অসামঞ্জস্যতার জন্য হয়। এই অবস্থায় দুটি ওভারি থেকে প্রচুর অপরিণত এগ নিঃসৃত হয় যা কিছু সময় পর সিস্টে পরিণত হয়।
আরেকটি হল পি সি ও এস অর্থাৎ পলি সিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রোম। যা কিনা একটি এন্ডোক্রিন সিস্টেম ডিসঅর্ডার। এই অবস্থায় ওভারিতে প্রচুর এন্ডোজেন তৈরি হয় যা ডিম্বাণু তৈরি ও নিঃসরণে বাধা সৃষ্টি করে।এই ডিম্বাণুগুলির কয়েকটা তরল পূর্ণ সিস্টে পরিণত হয়ে ওভারিতে জমা হয় ও একে ফুলিয়ে দেয়।
প্রথমে বলি পিসিওডি নিয়ে, এর সাইড এফেক্টের মধ্যে আসে দেহে অতিরিক্ত পুরুষ হরমোন ও ইনসুলিন তৈরি হওয়া। তাহলে আমরা কি করে বুঝবো যে এরকম কোন সমস্যা আমাদের শরীরে আছে?
শরীরে আসবে কিছু পরিবর্তন, সেই দেখেই বুঝতে হবে যে নাহ্ এবার ডাক্তার দেখানোর প্রয়োজন আছে, তাহলে দেখে নেওয়া যাক সেগুলো কি কি-
প্রথমেই দেখা যাবে যে
* মেন্সট্রুআল সাইকেল অনিয়মিত বা বন্ধ হয়ে গেল হঠাৎ করে
* দেহের বিভিন্ন জায়গায় অনিয়ন্ত্রিত চুলের বৃদ্ধি দেখা যাবে
* মাথার চুল পাতলা হয়ে যাবে
* হাজার ফেসপ্যাকের পরেও ব্রণ এর সমস্যা কিছুতেই কমবেনা
* হঠাৎ করে ওজন বেড়ে গেলেও কিন্তু সাবধান হোন
* দেহে তৈরি হবে ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স
* সামান্য কারণেই স্ট্রেস বাড়তে থাকে
এতগুলো সমস্যার তাহলে সমাধান কি?
উপায় কিন্তু মাত্র দুটি, ওজন কমানো ও হরমোনাল সাইকেল ঠিক করা।সুষম খাদ্য ও যোগব্যায়াম এই দুই এর দ্বারাই এটা করা হল সবচেয়ে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি।
সুষম খাদ্যের ক্ষেত্রে বলব স্ট্রিক্ট ডায়েটিং কিন্তু কখনোই রেকোমেনডেড নয়। একটা ব্যালান্সড উপায়ে ওজন কমানোটাই লক্ষ্য হওয়া উচিত, কয়েকটা ছোটো ছোটো জিনিস মাথায় রাখলেই চলবে-
১. কোনোভাবেই মিল স্কিপ করা চলবেনা, প্রধানত ব্রেকফাস্ট।কমপ্লেক্স কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন গুড ফ্যাট ও মরসুমি ফল যেন থাকে।
২. সারাদিনের ক্যালোরি কাউন্ট কমাতে হবে, প্রয়োজনীয় ক্যালোরির থেকে কম ক্যালোরি গ্রহণ করতে হবে, আবার প্রোটিনের চাহিদাও যেন মেটে সেটাও মাথায় রাখতে হবে।
৩. ভাজাভুজি যতটা সম্ভব কম খেতে হবে।
৪. সারাদিনে প্রচুর শাকসবজি খেতে হবে।
৫. আমন্ড, আখরোট ইত্যাদি গুড ফ্যাট যুক্ত নাটস যোগ করতে হবে।
৬. চিনি , মিষ্টি গুড় ও মধু জাতীয় জিনিস খাদ্যতালিকা থেকে বাদ দিতে হবে
৭. প্রতিদিন একটা-দুটো কিউব ডার্ক চকলেট হরমোনাল সামঞ্জস্যতা বজায় রাখতে কিন্তু বেশ সাহায্য করে কারণ এতে রয়েছে প্রচুর পলিফেনল।
৮. পিসিওডি থাকলে মেন্সট্রুয়াল সাইকেলের সময় হেভি ব্লিডিং হতে থাকে, যার ফলে আয়রন ডেফিসিএনসি এনিমিয়া দেখা যায়, তাই আয়রন, ভিটামিন সি যুক্ত খাবার বেশি খেতে হবে
৯. ডায়েটে রাখতে হবে নাটস, শাকসবজি, হোল গ্রেন সিরিয়ালস কারণ এগুলোতে আছে প্রচুর ম্যাগনেসিয়াম যা হরমোনাল সামঞ্জস্য বজায় রাখে।
১০. দারচিনি ও হলুদের কারকিউমিন এর ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স এর ওপর বেশ প্রভাব দেখা যায়।
দুধ খাবো না খাবো না? পিসিওডি এর ডায়েটে একটা তর্ক দেখা যায় দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার নিয়ে।
দুধের শর্করা ল্যাকটোজ এন্ড্রোজেন এর ক্ষরণ বাড়িয়ে দেয়, ফলে অনেক ক্ষেত্রেই ব্রণ জাতীয় স্কিন ইনফেকশন বেশি দেখা যায়, এছাড়াও ল্যাকটোজ শর্করা IGF-1নামক ইনসুলিন গ্রোথ ফ্যাক্টর কে উদ্দীপিত করে দেহে ইনসুলিনের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। ল্যাকটোজ শর্করার উপিস্থিতি কিছু ক্ষেত্রে ইনসুলিন সেনসিটিভিটি কমিয়ে দেয় তাই অনেকেই এই সময় দুধ এড়িয়ে চলেন। তবে বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা কিন্তু এখনো পাওয়া যায়নি সেভাবে। তবে টক দই প্রতিদিন ডায়েটে রাখা উচিৎ, কারণ এতে রয়েছে প্রচুর প্রবায়োটিক ব্যাকটেরিয়া।
এর সঙ্গে চলুক নিয়মিত যোগাসন ও ফ্রি হ্যান্ড অভ্যাস, পবনমুক্তাসন, ভেকাসন, ভুজঙ্গা সন, নৌকাসন, ইত্যাদি ও সূর্য নমস্কারের নিয়মিত অভ্যাস কিন্তু এই সমস্যা থেকে অনেকটাই মুক্তি দিতে পারে। যেহেতু এটা একটা লাইফ স্টাইল জনিত সমস্যা তাই লাইফস্টাইল পরিবর্তন এ-র মাধ্যমে আনতে হবে।
এই লেখকের সব লেখা পড়ুন নিচের লিংক থেকে।
www.royalbangla.com/dr.hasnahossain
লেখিকা
ডাঃ হাসনা হোসেন আখী
এমবিবিএস, বিসিএস (স্বাস্থ্য)
এমএস (অবস এন্ড গাইনী)
ট্রেইন্ড ইন ল্যাপারস্কপি এন্ড ইনফার্টিলিটি স্ত্রী রোগ ও প্রসূতি বিদ্যা বিশেষজ্ঞ এবং ল্যাপারস্কপিক সার্জন।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল।
নিয়মিত রোগী দেখছেন: মার্কস কনসালটেশন সেন্টার।
প্রতিদিন : বিকেল ৫ টা হতে রাত ৮ টা পর্যন্ত।
সিরিয়াল :
01729-269437.
সিরাজ মার্কেট (২য় তলা), কচুক্ষেত, ঢাকা-১২০৬। (ফুট ওভার ব্রিজের পাশে)
লেখকের সাথে যোগাযোগ করতে নিচের ফেসবুক পেইজে ক্লিক করুন
www.facebook.com/dr.hasnahossain