Inflation কী?
ইনফ্লেশন (Inflation) হলো একটি অর্থনৈতিক অবস্থা যেখানে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পণ্যের দাম বৃদ্ধি পায় এবং টাকার ক্রয়ক্ষমতা কমে যায়।
সহজভাবে বললে:
আগে যেটা ১০০ টাকায় কেনা যেত, কিছুদিন পরে সেটা কিনতে ১২০ টাকা লাগছে — এই মূল্যবৃদ্ধির ঘটনাই হচ্ছে ইনফ্লেশন।
ইনফ্লেশনের পেছনে কিছু কারণ:
চাহিদা বেশি, জোগান কম: বাজারে কোনো পণ্যের চাহিদা বেড়ে গেলে কিন্তু সেই অনুপাতে জোগান না বাড়লে দাম বাড়ে।
উৎপাদন খরচ বাড়া: কাঁচামাল, শ্রম বা পরিবহন খরচ বেড়ে গেলে কোম্পানিগুলোও পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেয়।
মুদ্রা সরবরাহ বৃদ্ধি: যদি দেশে অতিরিক্ত টাকা ছাপানো হয়, তাহলে সবার হাতে বেশি টাকা থাকে — ফলে মানুষ বেশি কেনাকাটা করতে চায়, এতে দাম বাড়ে।
ইনফ্লেশনের প্রভাব:
সাধারণ মানুষের ওপর চাপ: প্রয়োজনীয় জিনিসের দাম বাড়লে মানুষের জীবনযাত্রার খরচ বেড়ে যায়।
সঞ্চয়ের মান কমে: ব্যাংকে রাখা টাকার আসল ক্রয়ক্ষমতা কমে যায়।
ঋণগ্রহীতার জন্য ভালো: যাদের ঋণ রয়েছে, তারা ভবিষ্যতে কম মূল্যের টাকায় সেই ঋণ শোধ করতে পারে।
চলুন তাহলে ইনফ্লেশন নিয়ে আরেকটু গভীরে যাই — উদাহরণসহ এবং প্রকারভেদ ব্যাখ্যা করি।
ইনফ্লেশনের প্রকারভেদ (Types of Inflation):
1. চাহিদানির্ভর ইনফ্লেশন (Demand-pull Inflation)
যখন মানুষের হাতে বেশি টাকা থাকে এবং সবাই বেশি পরিমাণে পণ্য কিনতে চায়, তখন চাহিদা বেড়ে যায়। কিন্তু সেই পরিমাণে যদি পণ্য উৎপাদন না হয়, তাহলে দাম বেড়ে যায়।
*** উদাহরণ: ঈদের সময় মানুষের কেনাকাটার পরিমাণ বেড়ে যায় — ফলে কাপড়, মিষ্টি বা উপহার সামগ্রীর দাম বেড়ে যায়।
2. জোগানঘাটতিজনিত ইনফ্লেশন (Cost-push Inflation)
যখন পণ্য তৈরি করতে ব্যবহৃত কাঁচামালের দাম বেড়ে যায়, তখন উৎপাদন খরচও বাড়ে। এর ফলে কোম্পানিগুলো দাম বাড়িয়ে দেয়।
** উদাহরণ: যদি জ্বালানির দাম বেড়ে যায়, তাহলে পরিবহন খরচ বাড়বে — ফলে সব পণ্যের দামই বাড়তে পারে।
3. মুদ্রাস্ফীতিজনিত ইনফ্লেশন (Monetary Inflation)
যখন সরকার অতিরিক্ত টাকা ছাপে এবং বাজারে বেশি টাকা ছড়িয়ে পড়ে, তখন টাকার মান কমে যায়।
** উদাহরণ: যদি হঠাৎ করে সরকার ১০ লাখ মানুষের মধ্যে বিশাল অঙ্কের টাকা বিতরণ করে, তাহলে চাহিদা হঠাৎ বেড়ে যাবে এবং দামও বাড়বে।
একটি বাস্তব উদাহরণ:
ধরুণ, আপনি প্রতি মাসে ১০০ টাকায় চাল, ডাল, তেল, আর ডিম কিনে খা্ন।কিন্তু এক বছর পরে একই জিনিস কিনতে আপনার ১২০ টাকা লাগে। এই অতিরিক্ত ২০ টাকাই হচ্ছে 'ইনফ্লেশন' এর প্রতিফলন — টাকার ক্রয়ক্ষমতা কমে গেছে।
ইনফ্লেশন ভালো না খারাপ?
ভালো দিক
- মৃদু ইনফ্লেশন অর্থনীতিকে চাঙা রাখে
- ব্যবসায়ীরা বেশি লাভ পায়, বিনিয়োগ বাড়ে
- নতুন চাকরি তৈরি হতে পারে
খারাপ দিক
- বেশি ইনফ্লেশন জীবনযাত্রা কঠিন করে তোলে
- সাধারণ মানুষ সঞ্চয় করতে পারছে না
- দ্রব্যমূল্য বাড়লে দরিদ্ররা ক্ষতিগ্রস্ত হয়
ইনফ্লেশন নিয়ে মোটামুটি অনেক তথ্যই পেলাম । এবার আসুন জেনে নেয়া যায় ইনফ্লেশন কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
ইনফ্লেশন নিয়ন্ত্রণের উপায়গুলো:
1. মুদ্রানীতি (Monetary Policy) কড়াকড়ি করা
বাংলাদেশ ব্যাংক সুদের হার (policy rate) বাড়িয়ে টাকা ধার নেওয়া কঠিন করে দেয়। এতে:
- মানুষ কম ঋণ নেয়
- বাজারে টাকার প্রবাহ কমে
- চাহিদা কমে গেলে পণ্যের দামও কমে
** উদাহরণ: বাংলাদেশ ব্যাংক রেপো রেট বাড়িয়ে ১০% করেছে ২০২৪ সালে।
2. সরকারি ব্যয় কমানো (Reducing Government Spending)
যদি সরকার কম খরচ করে, তাহলে বাজারে অতিরিক্ত টাকা আসে না। এতে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে থাকে।
3. কর বৃদ্ধি করা (Increasing Taxes)
ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের ওপর কর বাড়ালে তাদের হাতে কম টাকা থাকে, ফলে চাহিদা কমে যায়। তবে এটি বেশি করলে মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে — তাই ভারসাম্য রাখতে হয়।
4. সরবরাহ বৃদ্ধি করা (Increasing Supply of Goods)
যদি বাজারে পর্যাপ্ত পণ্য থাকে, তাহলে দাম বাড়ার সুযোগ থাকে না। এজন্য:
- কৃষি উৎপাদন বাড়ানো
-আমদানি সহজ করা
-পরিবহন সমস্যা সমাধান করা দরকার
5. মূল্য নিয়ন্ত্রণ নীতি (Price Control)
সরকার কিছু পণ্যের জন্য নির্ধারিত মূল্য (price cap) নির্ধারণ করতে পারে, যাতে অসাধু ব্যবসায়ীরা দাম বাড়িয়ে বিক্রি করতে না পারে।
6. সাবসিডি (Subsidy) প্রদান
গরিব ও মধ্যবিত্তদের জন্য চাল, ডাল, তেল, গ্যাসের ওপর ভর্তুকি দিলে তারা স্বস্তি পায়, মূল্যস্ফীতির চাপ কিছুটা কমে।
7. আমদানি শুল্ক কমানো
প্রয়োজনীয় পণ্যের ওপর আমদানি শুল্ক কমিয়ে দিলে বিদেশ থেকে পণ্য আসা সহজ হয়, ফলে বাজারে সরবরাহ বাড়ে এবং দাম কমে।
সংক্ষিপ্তে মনে রাখার ফর্মুলা:
কমাও চাহিদা, বাড়াও জোগান = ইনফ্লেশন নিয়ন্ত্রণে সহায়তা।
লেখক
মোঃ ফাহিম আল ফাহাদশিক্ষাগত যোগ্যতাঃ
স্নাতক (অনার্স) - অর্থনীতি
হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়,দিনাজপুর-৫২০০