করোনা ভাইরাস তথা যেকোনো ভাইরাস থেকে নিজেকে সুরক্ষিত রাখতে সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে ইমিউন সিস্টেম। ইমিউন সিস্টেম তথা রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা কার্যকর রাখতে খাদ্য তালিকায় পুষ্টিকর খাবার রাখা অতীব জরুরী। খুব সহজেই দৈনন্দিন খাদ্যতালিকায় অন্তর্ভুক্ত খাবার থেকে প্রয়োজনীয় নিউট্রিয়েন্ট পাওয়া সম্ভব যেটাতে ইমিউন সিস্টেম ভালো থাকবে।
ছোলা তেমনই একটি পুষ্টিকর খাবার। রমজান মাসে প্রায় সবার অভ্যাসগতভাবে ছোলা খাওয়া হলেও পরবর্তী সময়ে প্রাত্যহিক খাবারের তালিকায় এটি তেমন প্রাধান্য পায় না। কিন্তু ছোলা পুষ্টিগুনে সমৃদ্ধ উদ্ভিজ্জ আমিষের একটি চমৎকার উৎস যেটি কিনা রোগ প্রতিরোধে বিশেষ সহায়ক। চলুন ছোলার পুষ্টিগুণ এবং স্বাস্থ্য উপকারিতা সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
ছোলার পুষ্টি উপাদান -----
ছোলা উদ্ভিজ্জ প্রোটিনের খুব ভালো উৎস হওয়াতে প্রোটিনের চাহিদা মেটাতে খাবারের তালিকায় এটি অন্তর্ভুক্ত করা যায়। প্রতি ১০০ গ্রাম ছোলা থেকে পাওয়া যায় ৩৭০ ক্যালরিরও অধিক শক্তি, প্রায় ২০ গ্রাম প্রোটিন, ৬৩ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট যার মধ্যে প্রায় ১২ গ্রামই ডায়েটেরি ফাইবার এবং ৬ গ্রাম ফ্যাট। ফাইবার বেশি থাকায় এর গ্লাইসেমিক ইনডেক্স অন্যান্য স্টার্চি সবজি থেকে কম। ছোলায় আরও আছে বিভিন্ন ভিটামিন ও খনিজ লবণ। যার মধ্যে অন্যতম ফলেট এবং আয়রন। এছাড়াও ছোলা জিংক এবং কপারের উল্লেখযোগ্য উৎস, যেগুলি ইমিউন সেলের গঠন, কার্যকারিতায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
ছোলার স্বাস্থ্য উপকারিতা-----
- ছোলা শারীরিক প্রদাহের বিরুদ্ধে খুব ভালো কাজ করে বলে ইমিউন সিস্টেমে বিশেষ সহায়ক।
- ছোলাতে জটিল শর্করা থাকে বলে ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য উপকারী।
- যারা ওজন কমাতে চাচ্ছেন তাদের জন্য এটি খুব ভালো অপশন।
- ছোলাতে থাকা ভিটামিন-মিনারেল কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে ফলে হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে এটি দারুণ সহায়ক।
- ফাইবার থাকায় এটি হজমে সাহায্য করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।
- ছোলাতে থাকা ভিটামিন কে, ক্যালসিয়াম শোষনে সাহায্য করে। এটি হাড় ক্ষয় রোধ এবং হাড় গঠনে ভূমিকা পালন করে।
ছোলা খাবার ধরন-----
- কি উপায়ে ছোলা খাবেন সে বিষয়ে সাবধান হতে হবে। রান্না করা ছোলাতে তেল-মশলার কারণে ক্যালরি ভ্যালু বেড়ে যায়। তাই ভুনা করে খেতে চাইলে কম তেল-মশলায় প্রস্তুত করে খেতে হবে এবং সঠিক পরিমানের দিকে খেয়াল রাখতে হবে। এছাড়া ছোলাতে বিদ্যমান ভিটামিন পেতে চাইলে যে পানিতে এটি সিদ্ধ করা হয় সেই পানি না ফেলাই উত্তম।
- স্বাস্থ্যকর উপায়ে ছোলা খেতে চাইলে অবশ্যই ছোলার সালাদ করে খেতে হবে। কাঁচা বা সিদ্ধ ছোলার সালাদ উভয় ভাবেই সালাদ করে খাওয়া যায়। সেক্ষেত্রে ছোলার সাথে বাড়তি তেল-মশলা যোগ না করে টকদই, টমেটো, শশা, আদা কুচি, কাঁচা মরিচ, ধনিয়া পাতা ব্যবহার করে সালাদ তৈরি করবেন, এগুলি একি সাথে রোগ প্রতিরোধক হিসেবেও কাজ করে।
- অঙ্কুরিত ছোলাতে ভিটামিন-সি এর পরিমান ভালো থাকে। ছোলা দুই রাত ভিজিয়ে রেখে দিলে অঙ্কুরিত হয়ে যায়। পরবর্তীতে অঙ্কুরিত কাঁচা ছোলার সাথে একটু আদা কুচি যোগ করে খেলে উপকার পাবেন।
- সুস্থ ব্যক্তি প্রতিদিন ৩০ থেকে ৬০ গ্রাম ছোলা খেতে পারবেন।
সহজলভ্যতার বিচারে ছোলা হতে পারে আমিষের একটি উত্তম উৎস। স্বাস্থ্য সুরক্ষায় খেতে হবে সঠিকভাবে এবং পরিমিত পরিমাণে।
এই লেখকের সব লেখা পড়ুন নিচের লিংক থেকে।
www.royalbangla.com/NutritionistMonia
লেখক
পুষ্টিবিদ মুনিয়া মৌরিন মুমু
নিউট্রিশনিস্ট, বায়োজিন কসমেসিউটিক্যালস (উত্তরা ব্রাঞ্চ)
এক্স-ডায়েটিশিয়ান, ভাইবস হেল্থ কেয়ার বাংলাদেশ এবং বেক্সিমকো ফার্মা ডায়েট কেয়ার ডিভিশন
লেখকের সাথে যোগাযোগ করতে নিচের ফেসবুক পেইজে ক্লিক করুন
www.facebook.com/NutritionistMonia