আমাদের জনসংখ্যার একটা বিরাট অংশ ব্রণ ও ফুস্কুড়ি জনিত ত্বকের সমস্যায় ভুগেন এবং ডাক্তারের স্মরনাপন্ন হন। তবে এ ধরনের সমস্যা প্রতিকারের থেকে প্রতিরোধ অনেক বেশি সহজ এবং কার্যকরী। চিকিৎসায় কিছুদিন চাপা থাকলে ও নিয়মিত অভ্যাসের কিছু পরিবর্তন না করলে তা পুনরায় ফিরে আসে।
লক্ষণ
যখন ত্বকের উপরিভাগ অধিক তৈলাক্ত থাকে অথবা মৃত চামড়ায় আবৃত হয়ে যায় তখন সাধারণত ব্রণ বা ফুস্কুড়ি দেখা দেয়। বাইরে থেকে দেখতে সাদা, কালো অথবা লাল মুখো ফুস্কুড়ির মত যা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মুখমণ্ডল, চিবুক, কপাল, পিঠের উপরাংশ , কাঁধে অথবা গলায় দেখা দেয়। তরুণ বয়সে বিশেষ করে বয়সন্ধিকালিন সময়ে এ সমস্যা বেশি দেখা দেয় তবে যে কোন বয়সের মানুষেরই হতে পারে।
যে সকল কারণে ব্রণ ও ফুস্কুড়ি হয়ে থাকে-
১.জন্মগত : কিছু মানুষ জিনগত ভাবেই ব্রণ হওয়ার প্রবণতা নিয়ে জন্মায় । পূর্ববর্তী কোন নিকট আত্মীয়ের এ ধরনের সমস্যা থাকলে তা পরবর্তী প্রজন্মে প্রবাহিত হতে পারে।
২. খাদ্যাভ্যাসের প্রভাব: অতিরিক্ত ভাজাপোড়া খাবার ত্বকের এ সমস্যা তৈরি করতে পারে । এছাড়া খাবারে স্টার্চ ও চিনির আধিক্য থাকলে তা ব্রণ তৈরিতে সাহায্য করে। নিয়মিত প্রাকৃতিক তাজা ফলমূল ও সবজি খেলে ত্বকের সমস্যা দুর হয় ।
৩. দুধ এবং দুগ্ধ জাত খাবারের ভূমিকা: গবেষণায় দেখা যায় , দুধ এবং দুধ দ্বারা প্রস্তুত কৃত খাবার যথেষ্ট পুষ্টিকর উপাদান সমৃদ্ধ হলেও ত্বকের জন্য ক্ষতিকর কিছু উপাদান বহন করে। এ ধরনের খাবার ত্বকের তৈলাক্ততা বৃদ্ধি করে যা ফুস্কুড়ির অন্যতম কারণ ।
৪. চকলেট ও ব্রণ: চকলেট এর মধ্যে কিছু উপাদান ব্রণ ও ফুস্কুড়ি সৃষ্টিতে প্রভাব ফেলে । অধিক পরিমাণে চকলেট মৃত কোষের সৃষ্টি করে তাই তা এড়িয়ে চলা উচিৎ।
৫. আয়োডিনের প্রভাব: সামুদ্রিক মাছ ও অন্যান্য সামুদ্রিক খাবারে প্রচুর পরিমাণে আয়োডিন থাকে যা ত্বকের জন্য ক্ষতিকর । অবশ্যই পরিমিত পর্যায়ের আয়োডিন সকলেরই গ্রহণ করা আবশ্যক তবে অতিরিক্ত পরিমাণে সেবন করা যাবেনা ।
৬ অতিরিক্ত তেল- চর্বিযুক্ত খাবার: ফাস্টফুড , রেস্টুরেন্টের খাবার অথবা অধিক চর্বিযুক্ত মাংস বেশি পরিমাণে খাদ্য তালিকায় থাকা উচিৎ নয়। ত্বকের জন্য তা একেবারেই স্বাস্থ্যকর নয়।
৭ মেকআপ এবং প্রসাধনী সামগ্রীর প্রভাব: প্রসাধনী পণ্য ব্যবহারের আগে সর্বোচ্চ যাচাই বাছাই এবং মান সম্পর্কে অবগত হয়ে নেওয়া উচিৎ । এ ধরনের অনেক পণ্যতেই ত্বকের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর রাসায়নিক উপাদান ব্যবহার করা হয়। বিশেষ করে অননুমোদিত বা নকল পণ্য সমূহও হতে সতর্ক থাকতে হবে। মেকআপ ব্যবহার করলে তা অবশ্যই প্রয়োজন শেষে সম্পূর্ণ ভাবে তুলে ফেলতে হবে।
৮ মানসিক চাপ: দুশ্চিন্তা ও মানসিক চাপ ব্রণ উঠার অন্যতম একটি কারণ। মানসিক চাপে থাকলে মস্তিষ্ক তা প্রশমনের জন্য হরমোন নিঃসরণ করে যা ত্বকের উপরিভাগে তৈলাক্ততা সৃষ্টি করে এবং এ ধরনের সমস্যার জন্ম দেয়।
৯ অনিদ্রা ও ধূমপান: রাত্রে পরিমিত ঘুম না হওয়া ত্বকের রোগের কারণ এবং নিয়মিত ধূমপায়ী যারা তাদের জন্য ত্বকের সমস্যা বেশ স্বাভাবিক। ধূমপান অবশ্যই বর্জনীয় এবং অধিক রাত না জেগে থাকাই উত্তম।
১০ ব্রণ তৈরিতে ঔষধের প্রভাব:
* যক্ষ্মা , অঙ্গ প্রতিস্থাপন পরবর্তী চিকিৎসা এবং কিছু মানসিক স্বাস্থ্যের চিকিৎসার জন্য ব্যবহৃত ওষুধ এর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হিসেবে ব্রণ বা ফুস্কুড়ি দেখা দিতে পারে। তবে তা চিকিৎসা শেষে ধীরে ধীরে সেরে যায়।
* অনেক মহিলাদের জন্মনিয়ন্ত্রণকারি পিল সেবনেও এ ধরনের সমস্যা দেখা দেয়।
* কিছু মানুষ চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়াই পেশিবর্ধক বা শক্তিবর্ধক কিছু ওষুধ সেবন করে থাকেন যা একেবারেই অনুচিত । তাদের ক্ষেত্রেও এ রোগ দেখা দিতে পারে।
এই বিষয়গুলো খেয়াল রাখলে এবং প্রয়োজনীয় পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা মেইনটেন করলে
ব্রন সমস্যা থেকে মুক্তি
পাওয়া যায় । তারপরও যদি সে রকম সমস্যা দেখা দেয় তবে অবশ্যই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিৎ।
|